সহজ কৌশলে প্রকৃতি-প্রত্যয় নির্ণয়

প্রত্যয়


প্রত্যয়

: (কৃৎ প্রত্যয়, তদ্ধিত প্রত্যয়) [The Basic Part]

আজকে কৃৎ প্রত্যয়; তদ্ধিত প্রত্যয়; ক্রিয়া প্রকৃতি বা ধাতু; নামপ্রকৃতি বা শব্দমূল— এগুলো সহজে কীভাবে চেনা যায় বা সহজে নির্ণয় করা যায় সেটি শিখাব। যাঁরা এগুলো নির্ণয় করতে পারেন না তাঁদের জন্য মূলত এই লিখাটি।🙂
আমি দুটি উদাহরণের সাহায্যে বুঝানোর চেষ্টা করছি।
  • চলন্ত = চল্ + অন্ত
  • ঢাকাই = ঢাকা + আই
১নং এর ব্যাখ্যা‘অন্ত’ শব্দাংশটি প্রত্যয়, আর ‘চল্’ অংশটি প্রকৃতি। মনে রাখবেন অধ্যায়ের নাম ‘প্রকৃতি ও প্রত্যয়’ তাই আগের অংশটি (চল্) প্রকৃতি ও পরের অংশটি (অন্ত) প্রত্যয়।
২নং এর ব্যাখ্যাঅনুরূপভাবে— ‘আই’ প্রত্যয়, আর ‘ঢাকা’ প্রকৃতি।
মজার বিষয় হচ্ছে প্রকৃতি দুই প্রকার। যথা— ক্রিয়া প্রকৃতি ও নাম প্রকৃতি। আবার, প্রত্যয়ও দুই প্রকার। যথা— কৃৎ প্রত্যয় ও তদ্ধিত প্রত্যয়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ‘চল্’ ও ‘ঢাকা’ কোন ধরনের প্রকৃতি?
→ চল্— দ্বারা সাধারণত কাজ বুঝাচ্ছে সুতরাং মনে রাখবেন কোনো মূল দ্বারা কাজ বুঝালে তা ক্রিয়া প্রকৃতি বা ধাতু। আর শব্দ বা নাম বুঝালে তা নাম প্রকৃতি। যেমন— ‘ঢাকা’ দ্বারা কোনো শব্দ বা নাম বুঝাচ্ছে সুতরাং এটি নাম প্রকৃতি।

নির্ণয়ের সূত্রকাজ বুঝালেই ক্রিয়া প্রকৃতি অন্যথায় নাম প্রকৃতি। যেমন— চল্+অন্ত (চলন্ত), ঢাকা+আই (ঢাকাই), শীত+ল (শীতল), দেখ্+আ (দেখা), নীল+ইমা (নীলিমা), বুদ্ধি+মতুপ্/মান (বুদ্ধিমান), পড়্+আই (পড়াই), মেধা+বিন (মেধাবী), কর্+অন (করণ), খেল্+অনা (খেলনা)। লক্ষ্য করুন এখানে চল্, দেখ্, পড়্, কর্, খেল্— এগুলো দ্বারা কাজ বুঝাচ্ছে সুতরাং এগুলো ক্রিয়া প্রকৃতি বা ধাতু। অন্যদিকে— ঢাকা, শীত, নীল, বুদ্ধি, মেধা— এগুলো দ্বারা কাজ বুঝাচ্ছে না সুতরাং এগুলো নাম প্রকৃতি।😎 লক্ষণীয়: দৃশ্যমান = দৃশ্ + শানচ্। এখনে আপনি মূল (দৃশ্) কাজ কিনা আপনি বুঝতে পারছেন না। এই জন্য আপনি প্রত্যয়ের ১ম পার্টটি পড়বেন তাহলেই বুঝতে পারবেন।

এবার আসা যাক—কৃৎ প্রত্যয় আর তদ্ধিত প্রত্যয় কীভাবে চেনা যায়।

আমরা জানি, চলন্ত (চল্+অন্ত) এবং ঢাকাই (ঢাকা+আই) এখানে ‘অন্ত’ ও ‘আই’ — প্রত্যয় কিন্তু কোন ধরনের প্রত্যয়? —কৃৎ প্রত্যয় নাকি তদ্ধিত প্রত্যয়! 🤔
মনে রাখবেন, ক্রিয়া প্রকৃতি বা ধাতুর সাথে প্রত্যয় যুক্ত হলে তা কৃৎ প্রত্যয় আর নাম প্রকৃতির সাথে প্রত্যয় যুক্ত হলে তা তদ্ধিত প্রত্যয়। এখানে ‘অন্ত’ প্রত্যয়টি যুক্ত আছে ‘চল’ এর সাথে যা ক্রিয়া প্রকৃতি বা ধাতু তাই এই ‘অন্ত’ প্রত্যয়টি হবে কৃৎ প্রত্যয়। অপরদিকে— ‘আই’ প্রত্যয়টি যুক্ত আছে ‘ঢাকা’ এর সাথে যা নাম প্রকৃতি তাই এই ‘আই’ প্রত্যয়টি হবে তদ্ধিত প্রত্যয়।

নির্ণয়ে সূত্রকাজের সাথে যুক্ত হলে কৃৎ প্রত্যয় অন্যথায় তদ্ধিত প্রত্যয়। যেমন— চল্+অন্ত (চলন্ত), ঢাকা+আই (ঢাকাই), শীত+ (শীতল), দেখ্+(দেখা), নীল+ইমা (নীলিমা), বুদ্ধি+মতুপ্/মান (বুদ্ধিমান), পড়্+আই(পড়াই), মেধা+বিন্ (মেধাবী), কর্+অন (করণ), খেল্+অনা (খেলনা)। লক্ষ্য করুন, এখানে (অন্ত, আ, আই, অন, অনা) এগুলো যুক্ত কাজের সাথে তাই এগুলো হবে কৃৎ প্রত্যয়। অপদিকে— (আই, ল, ইমা, মতুপ্/ মান, বিন্,) এগুলো কাজের সাথে যুক্ত নাই তাই তদ্ধিত প্রত্যয়। 😎

এবার আসা যাক ধাতু চিহ্নের () ব্যবহারে—

ধাতু চিহ্ন হয় শুধু ক্রিয়া প্রকৃতি বা ধাতুর পূর্বে কিন্তু নাম প্রকৃতির পূর্বে ধাতু চিহ্ন হয় না। তাই উপরের দুটি উদাহরণে [চলন্ত = চল্ + অন্ত] ও [ঢাকাই = ঢাকা + আই] এখানে চল্— ক্রিয়া প্রকৃতি তাই তার পূর্বে ধাতু চিহ্ন হয়েছে কিন্তু ‘ঢাকা’ নাম প্রকৃতি তাই তার পূর্বে ধাতু চিহ্ন হয়নি।

নির্ণয়ে সূত্রকাজের পূর্বে ধাতু চিহ্ন হয় অন্যথায় ধাতু চিহ্ন হয় না। যেমন— √চল্+অন্ত (চলন্ত), ঢাকা+আই (ঢাকাই), শীত+ল (শীতল), √দেখ্+আ (দেখা), নীল+ইমা (নীলিমা), বুদ্ধি+মতুপ্/মান (বুদ্ধিমান), √পড়্+আই (পড়াই), মেধা+বিন (মেধাবী), √কর্+অন (করণ), √খেল্+অনা (খেলনা)। লক্ষ্য করুন এখানে (চল্, দেখ্, পড়্, কর্, খেল্)— এগুলো দ্বারা কাজ বুঝাচ্ছে সুতরাং এগুলো পূর্বে ধাতু চিহ্ন () হবে। অন্যদিকে— ঢাকা, শীত, নীল, বুদ্ধি, মেধা— এগুলো দ্বারা কাজ বুঝাচ্ছে না সুতরাং এগুলো পূর্বে ধাতু চিহ্ন হবে না।😎



ক্রিয়ার মূল বা ধাতু নির্ণয়ের সূত্র :
ধরুন, বচন, বাচ্য, বক্তা, বক্তব্য—এই ৪টি শব্দের মূল হয় (বচ্) যা আমরা পারি এবং যুক্তিযুক্ত আবার ‘উক্ত’ ও ‘উক্তি’—এই ২টি শব্দের মূল হয় (বচ্) এইবার ব্যাপারটা একটু কেমন হয়ে গেল, তাই না!! 🤔
পাঠকদের মুখে প্রায় প্রশ্ন শুনে আসি বচন, বাচ্য, বক্তা, বক্তব্য—এই ৪টির মূল (বচ্) তা বুঝলাম কিন্তু উক্ত ও উক্তি শব্দে মুল কীভাবে (বচ্) হয়?? 🧐
আসুন ব্যাপারটা খুব সহজে বোঝানোর চেষ্টা করছি। লক্ষ করুন- বচন, বাচ্য, বক্তা, বক্তব্য, উক্ত, উক্তি —এই শব্দগুলোর মানে বলা রিলেটেড। তাই বলা রিলেটেড হলেই সাধারণত মূল (বচ্) হবে। তাই উক্ত ও উক্তি শব্দেও (বচ্) হয়েছিল। 😃 এইবার মনে হয় ব্যাপারটা একটু বোঝা গেছে। আরেকটা দেখি- দেখা সংক্রান্ত হলে মূল (দৃশ্) হবে। যেমন— দর্শন, দরর্শনীয়, দর্শক, দৃশ্য, দৃশ্যমান, দৃষ্টি, দৃষ্টান্ত, দ্রষ্টব্য এই সবগুলোই কিন্তু দেখা সংক্রান্ত তাই মূল (দৃশ্) হয়েছে। এভাবে নিম্নে দেওয়া হলো—

ক্রিয়ার মূল বা ধাতু নির্ণয়ের সূত্র:

  • বলা সংক্রান্ত = বচ্। যেমন— বচন, বাচ্য, বক্তা, বক্তব্য, উক্ত, উক্তি।
  • দেখা সংক্রান্ত = দৃশ্। যেমন— দর্শন, দর্শনীয়, দর্শক, দৃশ্য, দৃশ্যমান, দৃষ্টি, দৃষ্ট, দ্রষ্টব্য, দৃষ্টান্ত।
  • শোনা সংক্রান্ত = শ্রু। যেমন— শ্রবণ, শ্রবণীয়, শ্রাব্য, শ্রুত, শ্রুতি, শ্রোতা।
  • পড়া সংক্রান্ত = পঠ্। যেমন— পাঠ্য, পাঠক, পঠন, পঠনীয়, পঠিত, পঠিতব্য।
  • চলা সংক্রান্ত = চল্। যেমন— চালক, চলন, চলনীয়, চলন্ত, চলিষ্ণু, চলমান, চলিত, চলা।
  • করা সংক্রান্ত = কৃ। যেমন— কার্য, করণ, করণীয়, কারক, কর্তা, কর্তব্য, কর্ম।
  • যাওয়া সংক্রান্ত = গম্। যেমন— গত, বিগত, গতি, গমন, গন্তব্য।
  • সৃষ্টি সংক্রান্ত = সৃজ্। যেমন— ¯স্রষ্ঠা, সৃষ্ট, সৃষ্টি, সৃজন।
  • স্মরণ সংক্রান্ত = স্মৃ। যেমন— স্মৃতি, স্মরণ, স্মরণীয়, স্মারক।
  • পূজা সংক্রান্ত = পূজ্। যেমন— পূজা, পূজক, পূজারি, পূজনীয়, পূজিত।
  • যুক্ত সংক্রান্ত = যুজ্। যেমন— যুক্ত, যুক্তি, যোগী, যোজন, যোজক।
পরবর্তী আকর্ষণ: ছোট্ট একটি সূত্রের মাধ্যমে কখন কখন ক্রিয়ার মূলে হসন্ত বা হলন্ত চিহ্ন (্) হবে আর কখন হবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন